প্রতিবাদ যেন শান্তিপূর্ণ হয়, গাঁধী-পথের বার্তা নাখোদার
https://tinyurl.com/qk5dfx7
2:05 PM 17-Dec-19
"প্রতিবাদ যেন শান্তিপূর্ণ হয় "
এই ভাবনাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ , এর সঙ্গে প্রতিবাদের বা আন্দোলন দমনের রাষ্ট্রীয় জবাবটাও হওয়া চাই শান্তিপূর্ণ।
সময় তো অনেক গেছে, রাষ্ট্র, সমাজ,শাসনব্যবস্থা, সামাজিক মনন সবইতো হয়েছে আধুনিক, তবুও এখনো যেন আমরা সেই আদ্যিকালের
ধ্যান ধারণায় চলেছি । যে কোনো আন্দোলন মানেই জ্বালাও-পোড়াও , যে কোনো আন্দোলন দমন মানেই লাঠি-পেটা, কাঁদানে গ্যাস । আন্দোলনকারী ও আন্দোলন দমনকারীদের এই যুদ্ধ অনাদিকালের। এই যুদ্ধ যখন খারাপ মোড় নেয়, তখন দুই পক্ষই নির্যাতন, খুন, গুম, ধ্বংসে মেতে ওঠে।
সমাধানটা কোথায় ? বোঝার পর থেকেই দেখে আসছি রাজনৈতিক হানাহানি । ইতিহাসে পড়েছি অসংখ্য রাজনৈতিক গণহত্যার বিবরণ। রাজনীতি ভাগ করেছে দেশ, সমাজ, ধর্ম।
রাজনীতির পেশিশক্তির আঁচ প্রায়ই গায়ে এসে লেগেছে , রাজনৈতিক অবৈধ উপার্জনের শক্তি, অর্ধ-শিক্ষিত বন্ধুর মুখাবয়ব লোভী চকচকে করে তুলেছে ।
সময় বোধহয় এসেছে এই বিষয়ে নতুন করে ভাববার।
সেই ভাবনার প্রথম ও সর্বশেষ লক্ষ্য হলো "শান্তি", কোনোক্রমেই কোনো যুদ্ধ নয়। এই ভাবনা যদিও অবাস্তব ইউটোপিয়ার পর্যায়ে পরে, তবুও ভাবতে তো আর দোষ নেই আর সেই ভাবনা যদি সকলের মঙ্গলের জন্য হয় তবে তা ভাবা যেতেই পারে!
উদাহরণ দিয়ে ভাবনা শুরু করা যাক।
ধরুন, সরকার দেশের নাগরিকদের জন্য অকল্যানকর কোনো আইন প্রণয়ন করলো । কেন করলো, কিভাবে করলো সেসব প্রশ্নের উত্তর থাক কেননা সেগুলো রাজনীতির জটিল মারপ্যাঁচ এর বিষয় । যাহোক, সেই আইনের বিরুদ্ধে এবার আন্দোলন শুরু হয়ে গেলো জনগণের। আবার কখনো কখনো এমন হয় যে, সরকার মেজরিটির জন্য সঠিক- এমন আইন করার পরও কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থের বিরুদ্ধে হওয়ায় তারা আন্দোলন শুরু করলো। আর আন্দোলন মানেই মিছিল-মিটিঙ , রাস্তা অবরোধ, কর্মস্থল অবরোধ ইত্যাদি। সরকারি বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা, আগুণ দেয়া ইত্যাদি।এর প্রভাবে জনজীবনে অশান্তি শুরু হয়ে গেলো। এই অশান্তি দূর করতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন নেমে গেলো লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, অস্ত্র ইত্যাদি নিয়ে । এখন এই যুদ্ধে কোনো পক্ষ যত তাড়াতাড়ি জয়ী হয়, বা তাদের ভেতর সমঝোতা হয় তত তাড়াতাড়ি এই অশান্তি দূর হয়, নয়তো দু-দলের যুদ্ধে অশান্তি প্রলম্বিত হতে থাকে।
এমতাবস্থায় শান্তি সংরক্ষণের জন্য আমাদের করণীয় কি ? কারা সঠিক , রাষ্ট্র না আন্দোলনকারীরা? দু -পক্ষের এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া পর্যন্ত আমরা কি অপেক্ষায় থাকবো? এ সময়ে সরকারি বেসরকারি জান - মালের যে ক্ষতি সাধিত হবে, তা কি বন্ধ করার কোনো উপায় নেই?
এইসব নানাবিধ প্রশ্নের উত্তরে কিছু ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা যেতে পারে, তা হলো বিচার বিভাগ কিংবা কোনো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান সমূহের হস্তক্ষেপ ।
এই হস্তক্ষেপ কিছু বিশেষ সময়ে হতে পারে ।
১। যখন সংসদীয় কমিটিতে কোনো আইনের প্রস্তাবনা ও যাচাই বাছাই চলে।
প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। যদিও ধরে নেওয়া হয় যে, কোনো আইন সংসদে পাস্ হলেই সেটি জনগণের জন্য কল্যানকর হবে কিন্তু বাস্তবে অনেকসময়ই এর বিপরীত হতে দেখা যায় বা সমাজের কোনো অংশের জন্য কল্যানকর হলেও কিছু অংশের জন্য বা বিরোধী দলের জন্য অকল্যানকর। পৃথিবীতে এমন উদাহরণ বিস্তর। আমাদের দেশে বাকশালের প্রস্তাবনা কিংবা ইনডেমনিটি বিল এমনতরো উদাহরণ। পাশের দেশ ভারতে সাম্প্রতিক বাবরি মসজিদ ও এন আর সি-ক্যাব এমন উদাহরণ। যেগুলো নিয়ে বিতর্ক রাষ্ট্রে অশান্তির অবস্থা তৈরী করেছে বা একদা করেছিল ।
এই অকল্যানকর আইনগুলো রাজনৈতিক নানা অবস্থার কারণে হয় । এর বিরোধিতাও হয় নানা কারণে।
তাই এসব আইন যখন প্রস্তাবিত হয়, বিশেষ করে যেগুলো "ইউনিভার্সাল ল " গুলোকে পাশ কাটিয়ে কোনো বিশেষ দল বা দল সমূহের জন্য বিল আকারে স্থাপন করা হয়,তখনি এগুলোর বিষয়ে বিচার বিভাগ বা নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান সমূহের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কেননা মেজরিটি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠনকারী দল নিজেদের সুবিধার জন্য নানা আইন পাশ করে। তাই গণতন্ত্র পুরোপুরি গণতান্ত্রিক কখনোই নয়। অনেকক্ষেত্রেই ভোটের আগে তা ধূর্ত কৌশল, পেশিশক্তি ও অর্থ শক্তির গণতন্ত্র, ভোটের পরে তা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও প্রশাসনিক শক্তির গণতন্ত্র হয়ে দাঁড়ায় । অনেকক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোরও হস্তক্ষেপ কামনা করা যেতে পারে। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো, ভারতের ক্যাব আইনের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব।
যদিও এমনতরো হস্তক্ষেপ সরকারদলীয় রাজনীতিবিদদের পছন্দ হবে না, কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে এ বিষয়ে আমাদের সবার ভাববার বোধহয় সময় এসেছে। কোনো প্রতিষ্ঠানকেই একক ক্ষমতা দেওয়া উচিত নয় বরং প্রতিষ্ঠান সমূহের পারস্পরিক চ্যালেঞ্জ এর দৃষ্টিভঙ্গিই ভবিষ্যত রাষ্ট্রের ভিত্তি হতে পারে।যাহোক এই হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উক্ত প্রতিষ্ঠান গুলি যুক্তি তর্ক ও উক্ত আইন সমূহের বিষয়ে সাম্প্রতিক মেজরিটি সমর্থনের উপাত্ত দিয়ে সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক করবে।
২। যে কোনো আন্দোলন শুরু হবার পর।
কোনো আন্দোলন শুরু হয়ে তা চরমে উঠলে আন্দোলনকারী ও সরকারের নির্দেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার, আন্দোলন দমন এর কারণে ব্যাপক সরকারি, বেসরকারি জান -মাল ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও বিপর্যস্ত হয় জনজীবন।
তাই যে কোনো আন্দোলন শুরু হবার পর ও তা জনজীবন বিপর্যস্ত করবার আগেই , স্ব-প্রনোদিত হয়ে কিংবা সরকার ও আন্দোলনকারী,দুই পক্ষের থেকেই অভিযোগ, আপত্তি নিয়ে বিচার বিভাগ কিংবা নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো, উক্ত আন্দোলনের যৌক্তিকতা, সামাজিক সমর্থন, নৈতিকতা প্রভৃতি সুক্ষভাবে বিচারের মাধ্যমে এবং প্রয়োজনে সমাজের বৃহত্তর অংশের সাম্প্রতিক সমর্থন যাচাইয়ের মাধ্যমে যুক্তি-তর্ক তুলে ধরবেন ও রায় দেবেন। দুই পক্ষের মধ্যে কে সঠিক, একমাত্র বিচার বিভাগ কিংবা নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে রায় দিতে পারে এবং এ রায় না হওয়া পর্যন্ত উভয়পক্ষকে ধৈর্য্য ধরতে হবে । সঠিক সময়ে এই হস্তক্ষেপের বদলে আমরা রাষ্ট্রের অশান্তি দূর করতে পারবো।
তবে শান্তির লক্ষ্যে আমরা আরো কিছু প্রস্তাবনার কথা ভাবতে পারি।
যেমন ছাত্র-শিক্ষক পর্যায়ে ও বিচার বিভাগ ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান সমূহে প্রত্যক্ষ রাজনীতি নিষিদ্ধ করা যা বিচারিক রায়সমূহের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ -আইন প্রণয়নকারী, আইন প্রয়োগকারী ও বিচার বিভাগের স্ব -স্ব স্বাধীনতা আবার একই সাথে সহযোগিতার বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে। বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রে সাধারণত আইন প্রণয়নকারীদের নির্দেশে সিংহভাগ আদেশ ও বিচার বিভাগের নির্দেশে যথাযথ সময়ে আদেশ পালন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা । আবার আইন প্রণয়নকারীদের একচ্ছত্র নির্দেশে আইন প্রয়োগকারী ও বিচার বিভাগের নিয়োগ বা বদলি নিয়ন্ত্রিত হয় । কিন্তু এর কিছু পরিবর্তন করে, কোনো অপরিণামদর্শী আদেশকে বিচার বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা চ্যালেঞ্জ করে তা পুনর্বিবেচনার জন্য প্রস্তাব করতে পারে আর এটা তখনি সম্ভব যখন, এদের নিয়োগ কারো ওপর নির্ভর করবে না ও তা তাদের অভ্যন্তরীন প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিগতভাবে হবে।
আরো ভালো হয়, যদি আইন প্রণয়নকারী রাজনৈতিক নেতা বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি প্রাতিষ্ঠানিক করা যায় কেননা বর্তমান ব্যবস্থায় পেশিশক্তি ও অর্থশক্তির কারণে আধুনিক জটিল রাষ্ট্র চালানোর জন্য অনেকক্ষেত্রেই অযোগ্য নেতারা নির্বাচিত হয়ে আসেন ও কিছুদিন পরেই তাদের অযোগ্যতা নানাবিধ সমস্যার জন্ম দেয় । পৃথিবীতে এর উদাহরণ ভুরিভুরি। পলিটিকাল স্কুলিং এর ব্যবস্থা করা গেলে গণতন্ত্রে পেশিশক্তি ও অর্থশক্তির প্রভাব কমানো যাবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ যেমন মেধার ভিত্তিতে হয় বা না হলে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি যেমন এর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে পারে, ঠিক তেমনি পলিটিক্যাল স্কুলিং এর মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে নেতা নির্বাচনের বিষয়টি দলগত পেশিশক্তি বা অর্থশক্তির বিষয়গুলো খর্ব করার পাশাপাশি সুচারুভাবে দক্ষ ব্যক্তিদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনায় সাহায্য করবে। স্ব-শিক্ষিত ব্যক্তিগণও উক্ত স্কুলিং এর মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন।
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। আর তা হলো রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভের প্রস্তাবিত স্বাধীনতা অনেক সময় বুমেরাং হতে পারে কোনো একটি স্তম্ভের হটকারী পদক্ষেপের কারণে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় যে স্তম্ভ, জনগণ, তাদের সময়োচিত পদক্ষেপই অস্ত্র, যা কখনোই কোনো রাষ্ট্র পরাজিত করতে পারে নি। সাথে আন্তর্জাতিক সহায়তা তো আছেই।
যাহোক আরো ভাবনার অবকাশ থাকলো, সময়ে এই লেখাটি আপডেট করা হবে।













